কাশীনাথ ভট্টাচার্য / সপ্তম ম্যাচে প্রথম পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের, ন’জনে!

ইস্টবেঙ্গল – ০

মহমেডান – ০

খেলার শুরুতে ছিল ১৩ বনাম ১২। আধঘণ্টার মধ্যে ৯ বনাম ১১!

শুরুতে আইএসএল-এ দুই দলের অবস্থান, ‘হোম ম্যাচ’ হওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের ত্রয়োদশ স্থান শুরুতে। ২৯ মিনিটে নাওরেম মহেশ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে, একেবারেই অযৌক্তিক কারণে। নন্দকুমার শেখরকে সরাসরি লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল ২৮ মিনিটে, নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ডে পায়ে বল নিয়েও অযাচিত ডান কনুইয়ের আঘাতে অমরজিৎ সিং কিয়ামকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার কারণে। রেফারি হরিশ কুন্ডু কাছেই ছিলেন, দেখেছিলেন হাত চালাতে। লাল কার্ড দেখাতে দ্বিধা করেননি। তার প্রতিক্রিয়ায় মহেশের ওই অসন্তোষ, মাটিতে পড়ে থাকা জলের বোতলে চূড়ান্ত হতাশায় শট মেরে, সজোর। দুটি সিদ্ধান্তই ঠিক, নিঃসন্দেহ। তাই, ২৯ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল ন’জনে।

রেফারির যে-সিদ্ধান্ত ঠিক নয়, ২১ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলকে পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করা। বক্সের মধ্যেই দিমিত্রিওস দিয়ামানতাকোসকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেছিলেন লালরেমসাঙ্গা।রেফারি সেখানেও কাছেই ছিলেন। মনে করেছিলেন, ফাউল করা হয়েছে বক্সের ঠিক বাইরে। লালরেমসাঙগা আসলে যখন ফাউল করেছিলেন, দিমিত্রিওস ততক্ষণে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছেন। আইএসএল-এর সরকারি ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছিল ‘পেনাল্টি ওন’। পরে রেফারির সিদ্ধান্ত দেখে যা পাল্টে ফাউল দেওয়া হয়, বক্সের ছিক বাইরে। সেই ফ্রিকিক থেকে মাদিহ তালালের শট বাঁচিয়ে দেন মহমেডানের গোলরক্ষক ভাস্কর রায়,এবারের আইএসএল-এ যিনি প্রথমবার দাঁড়িয়েছিলেন তিনকাঠির তলায়।

এরপর যা হওয়ার, হল! ইস্টবেঙ্গল প্রাণপণে গোল বাঁচাল আর দুজন বেশি থাকার সুবিধা নিয়ে মহমেডান ঝাঁপাল দ্বিতীয় জয় তুলে নিতে। হিজাজি এবং সাউল ক্রেসপো একবার করে হলুদ কার্ড দেখে থাকা সত্ত্বেও লালহলুদের নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোঁ দ্বিতীয়ার্ধে দুই অভিজ্ঞ ফুটবলারকে তুলে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেননি, মহমেডানের কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ যা পেরেছিলেন অমরজিতের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণ বাড়াতে মাঝমাঠে লালরিনফেলা এবংসিজার মানজোকিকে নামিয়ে দুই ফরোয়ার্ডে চলে গিয়েছিলেন। ইস্টবেঙ্গল ৭৩ মিনিটে সোভিক চক্রবর্তীর জায়গায় এনেছিল জিকসন সিংকে। কাজ অবশ্য একই – রক্ষণে সাহায্য।

এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ভুটানে গিয়ে প্রথম ম্যাচ ড্র এবং টানা দুই ম্যাচ জিতে বাড়তি উদ্যমে যুবভারতীতে নেমেও আধঘণ্টার মধ্যেই ৯ জন হয়ে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাসের বেলুন চুপসে যাওয়াই স্বাভাবিক। প্রথমার্ধে দুটি লাল কার্ডের পরও তিন মিনিট ইনজুরিটাইম দেওয়া হয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধেযা দেওয়া হল ১০ মিনিট। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ে ৬১ মিনিট ছাড়াও মোট ১৩ মিনিটের ইনজুরি টাইম মিলিয়ে মোট ৭৪ মিনিট গোল বাঁচাতে লড়তে হল ইস্টবেঙ্গলকে। তবুও জালে বল ঢোকেনি, নতুন কোচের সান্ত্বনা!

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন প্রশান্ত গুপ্ত। ফেসবুকে জানালেন, কলকাতা লিগের প্রথম বিভাগে ১৯৩৪ সালে (১-০), আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ১৯৪২ সালে (১-০), ডিসিএম ট্রফির ফাইনালে ১৯৫৮ সালে (১-০), ডুরান্ড কাপে ১৯৫৯ সালের নকআউটে প্রথম সাক্ষাতে (৫-১) জিতেছিল মহমেডান। জাতীয় লিগে প্রথম দেখায় (২-১) প্রাথমিক পর্ব (১৯৯৬-৯৭) এবংমূলপর্বে (২০০৩-০৪) জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল (৪-০)। প্রথম দেখায় ডুরান্ডে মহমেডান দিয়েছিল সর্বোচ্চ গোল (৫), জাতীয় লিগের মূলপর্বের প্রথম সাক্ষাতে সেই চার গোলের ব্যবধানেই জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল (৪-০)। এবার আইএসএল-এ দুই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের প্রথম সাক্ষাৎ থাকল অমীমাংসিত।

সপ্তম ম্যাচে শূন্যের ‘গেরো’ কাটিয়ে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম পয়েন্ট এল, ন’জনে!

ইস্টবেঙ্গল – প্রভসুখন গিল; মহম্মদ রাকিপ, লালচুঙনুঙ্গা, আনোয়ার আলি, হিজাজি মাহের; নাওরেম মহেশ, সাউল ক্রেসপো, সৌভিক চক্রবর্তী (জিকসন সিং, ৭৩), মাদিহ তালাল (ক্লেইতোন সিলভা ৮৫), নন্দ কুমার; দিমিত্রিওস দিয়ামানতাকোস (ডেভিড লালনসাঙ্গা ৯৭)।

মহমেডান – ভাস্কর রায়;ভানলালজুইদিকা ছাকছুইক, গৌরব বোরা, ফ্লোরেন ওগিয়ের, জোদিংলিয়ানা; অমরজিৎ সিং কিয়াম, মির্জালোল কাসিমভ, লালরেমসাঙ্গা (মাকান উইঙ্কল ছোটে, ৬৫), আলেক্সিস গোমেস (লালরিনফেলা, ৪৬, মোহামেদ ইরশাদ ৯৩), বিকাশ সিং; কার্লোস হেনরিক ফ্রাঙ্কা (সিজার মানজোকি, ৪৬)।

রেফারি – হরিশ কুন্ডু

ছবি – আইএসএল

2 Responses

  1. ৩০ মিনিটে ৯ জন হয়ে গিয়ে, বাকি ৬০ মিনিট লড়ে শেষ পর্যন্ত ক্লিন শিট রেখে দেওয়া হয়তো ফল হিসাবে ভাল, কালকে খবরের কাগজে হয়তো লেখা হবে, “ইস্টবেঙ্গলের নৈতিক জয় হল”, কিন্ত ইস্টবেঙ্গলের পাসিং জঘন্য হয়েছেে। দ্বিতীয়ার্ধে দুটো তো দূরের কথা. একটা পাসও ঠিক হচ্ছিল না। আর ফুটবলাররাও ফিট নয়, ৬০-৬৫ মিনিটের পরে সবাই বেদম হয়ে পড়ছে। রাইট ব্যাকের জায়গার তো ভয়ঙ্কর অবস্থা, রাকিব সারা ম্যাচে ক’টা ব্লক করতে পেরেছে সন্দেহ আছে। যখন ১১ জনে খেলছিল তখনও আপফ্রন্টে দিয়ামনতাকোস কোনও সহযোগী পাচ্ছিল না। Passing accuracy 52% ছিল আজ, যেখানে মহামেডানের ৮৩%। ইস্টবেঙ্গলের পাস ১৩২, মহামেডানের ৪০৭। পরের দিন ১১ জনে খেলবে, কিন্তু খেলার উন্নতি না হলে কপালে দুঃখ আছে।

  2. খেলা একেবারেই ভাল হয়নি, সন্দেহ নেই। লিখিওনি তেমন। এমনকি ‘নৈতিক জয়’, এই ভাবধারায় আদৌ বিশ্বাসীই নই, তাই লিখিওনি শব্দদুটো।
    আর, সাত ম্যাচে এক পয়েন্ট, কপালে দুঃখ আর কতই বা বাড়বে!!
    যাক গে, পড়লেন, লিখলেন, কমেন্টও করলেন — আন্তরিক ধন্যবাদ 🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *