কাশীনাথ ভট্টাচার্য / দুগোলে এগিয়েও পয়েন্ট নষ্ট এমবিএসজি-র

এমবিএসজি – ২ (তিরি-আত্মঘাতী ১০, আলবের্তো ২৯)

এমসিএফসি – ২ (তিরি ৭০, থায়ের ৯০)

মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে রেকর্ড ভাল করার সুযোগ পেয়েও পারল না মোহনবাগানা সুপার জায়েন্ট। ৬৯ মিনিট পর্যন্ত ২-০ এগিয়ে থেকেও শেষ ২১ মিনিটে দুটো গোল হজম করে গতবারের লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়নরা শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়লেন এক পয়েন্ট নিয়ে। দুই দলের মুখোমুখি ১১ ম্যাচে মুম্বই এখনও ৭-২ এগিয়ে, বাকি দুটি ম্যাচ অমীমাংসিত।

অথচ ২৯ মিনিটের মধ্যেই দু-গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলেছিল এমবিএসজি। প্রথম গোল ৯ মিনিটে। বাঁদিক থেকে ঢুকে এসেছিলেন লিস্টন। মাইনাস রেখেছিলেন, মুম্বইয়ের গোলরক্ষক ফুরবা তেম্পা লাচেনপা বল বের করতে চেয়ে ভেতরে পাঠালে সামনে দাঁড়ায়ি থাকা তিরির হাঁটুতে লেগে জালে। তিরির কিছু করার ছিল না, ফুরবারও। যাঁরা এবারের ইউরো দেখেছেন, নিয়মিত এমন গোল দেখেছেন নিশ্চিত। গোলরক্ষকদের সমস্যা এইসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। বলে হাত না লাগালে বিপধের সম্ভাবনা, লাগালেও!

মুম্বই চার মিনিটে গোল করে ফেললেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। বিপিন সিং মাঠের বাঁদিক দিয়ে শুরু করেছিলেন আক্রমণ। বল পাঠিয়েছিলেন ডানপ্রান্তে ছাংতের কাছে যা ফেরত আসে ভেতরে জন মিকেল তোরালের পায়ে। মাটিঘেঁষা কোনাকুনি শট গোলেই রেখেছিলেন তোরাল। সমস্যাটা তৈরি করেন বিপিন। অফসাইডে এসে বলে পা ছুঁইয়ে। দরকার ছিল না, বল গোলেই যাচ্ছিল, তিনি পা না লাগালেই নিশ্চিত গোল।

পরে, ১৪ মিনিটে গ্রিক স্ট্রাইকার নিকোলাস কারেলিস ম্যাচের বোধহয় সহজতম সুযোগ নষ্ট করেছিলেন। ছাংতের সেন্টার তাঁর মাথা খুঁজে নিয়েছিল পেনাল্টি বক্সে। অরক্ষিত কারেলিস দেখেশুনেই বল বাইরে পাঠান। না হলে পাঁচ মিনিটেই সমতা ফেরাতে পারত মুম্বই। পারেনি, বরঞ্চ ২৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলেন স্পেনীয় ডিফেন্ডার আলবের্তো রোদরিগেজ। কর্নার থেকে জেসন কামিংস বল পাঠিয়েছিলেন মুম্বই বক্সের বাঁদিকে। আশিস ফিরিয়ে দেন উঁচু করে বক্সের মধ্যে। সেখানে গ্রে স্টুয়ার্টের মাথা থেকে আলবের্তোর পায়ে এবং বাঁপায়ের শটে ২-০।

ম্যাচ তারপর ধীরগতির। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৯ মিনিট পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য মুভও নেই। ৭০ মিনিটে দলকে অক্সিজেন দিলেন সেই তিরি, যাঁর পায়ে লেগেই প্রথম গোল, আত্মঘাতী, এবারের একাদশ আইএসএল-এ। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে বাঁপায়ে নেওয়া তিরির শট গোললাইনে সুপার জায়েন্ট ফুটবলারের গায়ে লেগে গোলে যাওয়ামাত্রই ফিসফাস শুরু হয়েছিল, ডুরান্ড কাপের পুনরাবৃত্তি কি আবারও হবে যেখানে এমনই প্রথমার্ধে দুগোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ম্যাচ হেরে ফিরতে হয়েছিল।

সেই কাজে কি সাহায্যই করে ফেললেন কোচ খোসে মোলিনা? আলবের্তোকে তুলে নিলেন ৮১ মিনিটে। রক্ষণে নির্ভরতা দিয়েছিলেন আলবের্তো, মুম্বইয়ের গ্রিক স্ট্রাইকার নিকোলাওস কারেলিসকে নিষ্প্রভ করে দিয়ে। কিন্তু মোলিনারও তেমন কিছু করার ছিল না। আলবের্তো চোট পেয়েছিলেন, বৃষ্টিভেজা মাঠে তাঁকে শেষ মিনিট দশেক আর মাঠে রাখার ঝুঁকি নিতে পারেননি স্পেনীয় কোচ। তাঁর জায়গায় এসেছিলেন টমাস অলড্রেড যিনি আটকে রাখতে পারেননি আরও এক পরিবর্ত থায়ের ক্রোমার দারুণ গোল, ম্যাচের একেবারে শেষে ৯০ মিনিটে। ডানপায়ে দুর্দান্ত প্লেস করে গিয়েছিলেন সিরিয়ার থায়ের।

সবে শুরু মরসুম। নিশ্চিতভাবেই এই এমবিএসজি বেশ ভাল দল। আপুইয়া, আশিস রাইরা বেশ ভাল খেললেন, আলবের্তোর কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ডিমিট্রি পেট্রাটোস এবং জেসন কামিংসের জোড়া ফলাও ক্ষুরধার হবে অন্য দলের বিরুদ্ধে নিশ্চিত। কুরুনিয়ান-থাপাদের পাশে মনবীর এবং সাহালও প্রয়োজনমতো গোল করে এবং করিয়ে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে দেবেন। মোলিনা আগে যখন এসেছিলেন এটিকে-র সাজঘরে, আক্রমণাত্মক ফুটবলে মন ভরিয়েছিলেন। এবারও যত সময় এগোবে, হয়ত কেন, আরও ভালই খেলবে সুপার জায়েন্ট, নিশ্চিত। রক্ষণে জোর বাড়ানোটাই আপাতত একমাত্র কাজ মোলিনার।

এমবিএসজি – বিশাল কাইথ; শুভাশিস বোস, দীপেন্দু বিশ্বাস, আলবের্তো রোদরিগেজ (টমাস অলড্রেড ৮১), আশিস রাই; লিস্টন কোলাসো (সাহাল আবদুল সামাদ ৭১), লালেংমাউইয়া রালতে, অভিষেক সূর্যবংশী (অনিরুধ থাপা ৭১), গ্রেগ স্টুয়ার্ট; ডিমিট্রি পেট্রাটোস, জেসন কামিংস (সুহেল ভাট ৮৯)

রেফারি – হরিশ কুন্ডু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *