কেকেআর – ২৬১/৬
আরসিবি – ২৬২/২
পাঞ্জাব ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচের সেরা – জনি বেয়ারস্টো
টস – পিবিকেএস, বোলিং
জোস বাটলার আর জনি বেয়ারস্টোর কল্যাণে নতুন করে ইংরেজশাসন প্রতিষ্ঠিত হল কলকাতায়!
পলাশী থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরের কলকাতায় ২১ এপ্রিল আর ২৬ এপ্রিল রবার্ট ক্লাইভের দেশোয়ালি দুই ভাই-এর ব্যাটে ক্রিকেটের নন্দনকাননের জায়গায় ইডেন যেন রেকর্ডকানন। শাহরুখ খানের দলের কাছে কলকাতার উইকেট এখন বাকি দুটি ম্যাচের জন্য ভয়ধরানো। দিল্লি আর মুম্বই আসছে!
২৬২ করলে জিতবে, আইপিএল-এর সর্বোচ্চ সফল রান-তাড়ায় এবারের নবম স্থানে থাকা দল পাঞ্জাব কিংস দ্বিতীয় স্থানাধিকারী কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারিয়ে দিল ৮ বল বাকি থাকতে, ৮ উইকেটে। ম্যাচে মোট ছক্কা ৪২। কেকেআর-এর ১৮, পাঞ্জাবের ২৪! সর্বোচ্চ রানতাড়ার পর সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ডও দেখল ইডেন।
আর দেখল জনি বেয়ারস্টোকে। বিশালদেহী বেয়ারস্টোর ব্যাটে রান ছিল না এই আইপিএল-এ। এল সেই দিন যখন আশা দুরাশা। ঘরের মাঠে ওপেনিং-এ সর্বোচ্চ, মোট রানেও সর্বোচ্চ তোলার পরও হেরে ফিরতে হবে ভাবেনি যখন ৫৫ হাজার ৭৬৭ জনের গ্যালারি, অসহনীয় গরমকে অগ্রাহ্য করে মাঠে উপস্থিত পৌনে সাত কোটির বেয়ারস্টো তাদের জন্য সাজিয়ে দিলেন বিনোদনের ডালি। শতরান পেলেন ৪৫ বলে, আটটি করে চার ও ছয়ের সাহায্যে। শেষে ১০৮ অপরাজিত, ৪৮ বলের ইনিংসে। সঙ্গী শশাঙ্ক সিং যাঁর ২৮ বলে ৬৮-র (দুটি চার আটটি ছয়) কারণে অসমাপ্ত তৃতীয় উইকেটে ৮৪ রান উঠল ৩৭ বলে। এবং হ্যাঁ, মিচেল স্টার্ক এই ম্যাচে অনুপস্থিত ছিলেন!
অর্শদীপ সিং-এর পরিবর্ত হিসাবে এসে প্রভসিমরন সিং শুরু করেছিলেন ২০ বলে ৫৪ করে। রিলি রোসুও ২৬ করলেও বেয়ারস্টোর সঙ্গে তাঁর জুটিতেও ৮৫ উঠেছিল ৩৯ বলে, প্রথম উইকেটে ৯৩-এর পর। তিন উইকেটের কোনও জুটিতেও রান ১০০ পেরল না, কিন্তু পেরিয়ে গেল টিটোয়েন্টিতে রান তাড়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড, অনায়াসে।
আগের দুটি ম্যাচে পরপর ২২৩ এবং ২২২ করে পরেরটিতে কোনও রকমে জেতার পরও কেকেআর-এর বোলাররা বেঙ্গালুরুর বোলারদের কাছেই শিক্ষা নিয়েছেন, নিশ্চিত! হাতে ২৬১ থাকায় শুরু থেকেই রান দেওয়ায় এমন উদার ছিলেন প্রত্যেকে, পাঞ্জাবের চার ব্যাটারের কারও কোনও অসুবিধা হয়নি কখনও। এখন থেকে কেকেআর আগে ব্যাট করলে প্রতিবারই আতঙ্কে থাকবে। তিনশোও যে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না!
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম উইকেটে কলকাতা তুলেছিল ১৩৮, মাত্র ১০.২ ওভারে। সুনীল নারিন ৩২ বলে ৭১ (ন’টি চার, চারটি ছয়) করে আউট হলেন বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দিয়ে। আড়াইশো তখন থেকেই ভাবনায়। ৩৭ বলে ৭৫ (ছ’টি করে চার ও ছয়) করে ফিল সল্ট আউট হয়ে ঘন ঘন মাথা নেড়ে বেরলেন ওভারদুয়েক পর, দলের ১৬৩ রানে। এই দুই ওপেনারের সংগ্রহ এবারের আইপিএল-এ যথাক্রমে –– নারিনের ৩৫৭, সল্ট ৩২৪। তিনটি অর্ধশত করেছেন সল্ট, দুটি অর্ধশত এবং একটি শতরানে নারিনের। দুই বিদেশির এমন গোড়াপত্তনেই কেকেআর-এর ঘোড়া এবারের আইপিএল-এ ছুটছিল দুরন্ত গতিতে। কিন্তু, আট ম্যাচেও সেই দশ পয়েন্টেই থেকে যেতে হল, বোলারদের চরম ব্যর্থতায়।
আন্দ্রে রাসেল সোজা ছয় মেরেছিলেন। আম্পায়ারের মাথার ওপর দিয়ে, ফ্ল্যাট। তারপরই দেখা গেল আম্পায়ারের ঠিক পেছনে লং অফ আর লং অনের মাঝখানে একজন ফিল্ডার এসে দাঁড়ালেন। ক্রিকেট মাঠে ফিল্ডিং-এ ওই জায়গাটার কোনও নাম নেই। ফিল্ডারকেও এমনভাবে দাঁড়াতে হল, আম্পায়ারের ঠিক পেছনে যাতে ব্যাটারের দেখতে সামান্যতম অসুবিধাও না হয়। তিনটি বল থাকতে হল ওখানে যার মধ্যে দুটি ওয়াইড এবং তৃতীয় বলে রাসেল আউট। ঘটনার গুরুত্ব ওই জায়গায় ফিল্ডারকে রাখার জন্যই। ভবিষ্যতে, বিশেষত আইপিএল-এ যা হয়ত অহরহ দেখা যাবে।
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কের জন্য শ্রেয়স আয়ারকে তেমন কাউকে তেমন কোনও জায়গায় রাখতে হয়নি। রেখেও লাভ হত না। দুজনের জন্যই বাংলার একটি শব্দই যথোপযুক্ত – অপ্রতিরোধ্য!
One Response
খুব সুন্দর লেখা। চমৎকার অ্যাঙ্গেল্ ও ব্যাখ্যা। আরও এরকম ভালো ভালো লেখা পড়ার আশায় রইলাম।