কেকেআর – ২২২/৬
আরসিবি – ২২১
কেকেআর ১ রানে জয়ী
ম্যাচের সেরা – আন্দ্রে রাসেল
টস – আরসিবি, বোলিং
২২৩ করে হার। ২২২ করেও হারের মুখ থেকে ১ রানে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। পরপর দুটি ম্যাচে ঘরের মাঠে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পারফরম্যান্স, চুম্বকে! শেষ বলে উইকেটরক্ষক ফিল সল্টের গোলরক্ষকের মতো শরীর ছুড়ে রান আউটে আবারও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল কেকেআর, সাত ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে।
আট ম্যাচে ২ নিয়ে তালিকার শেষে থাকা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু অবশ্য দেখিয়ে গেল, উইল জ্যাকস আর রজত পতিদারের ৪৮ বলে ১০২ রানের জুটির পর হাতে-আসা ম্যাচও কীভাবে ফেলে যেতে হয় ইডেনের ঘাসে! কার্যত বিদায় বিরাট কোহলিদের, এবার।
পাঁচ ম্যাচে জয় পাওয়ার পরও কেকেআর সমর্থকরা চিন্তিত, আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে কেনা মিচেল স্টার্ককে নিয়েই। শেষ ওভারে বল করতে এলেন যখন, ২১ রান হাতে। উল্টোদিকে ব্যাট হাতে করণ শর্মা, ব্যাটার হিসাবে যাঁকে নিয়ে ভাবনার জায়গাই ছিল না। অস্ট্রেলীয় স্টার্কের প্রথম চার বলে সেই করণের তিন ছক্কা! মাঝে দ্বিতীয় বলে স্টার্ক একাই ক্যাচের আবেদন করেছিলেন যা সল্ট সমর্থন করেননি। বুঝতে পেরেছিলেন, মাটিতে পড়ার পরই গ্লাভসে এসেছিল বল, যা দেখা গেল টিভি-রিপ্লেতে। সেই হতাশায় আরও দুটি ছয় দেওয়ার পর স্টার্ক পঞ্চম বলে শরীর নীচু করে করণের দেওয়া ফিরতি ক্যাচ ধরে ম্যাচে একটু হলেও আকর্ষণ ধরে রাখলেন। শেষ বলে তিন রান চাই, দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড়তে গিয়ে এক মুহূর্তের দেরি করে ফেললেন লোকি ফার্গুসন। তা-ও রমনদীপ সিংয়ের থ্রো ধরে স্টাম্পে বল লাগাতে গিয়ে সল্ট ওভাবে শরীর না ছুড়লে কেকেআর সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের নজির গড়ে ফেলতে পারত না। সঙ্গে প্রশ্নটা এবার আরও জোরালো —- ২৫ কোটির স্টার্ককে কি আর বয়ে বেড়াবে কেকেআর?
স্টার্ককে ম্যাচটা এনে দিয়েছিলেন অবশ্য ম্যাচের সেরা আন্দ্রে রাসেল। দুই হাফসেঞ্চুরিয়ন পতিদার আর জ্যাকসকে তুলে নিয়েছিলেন এক ওভারে (দ্বাদশ)। পরে, ১৯তম ওভার করতে এসে ওই সময়ের সবচেয়ে বেশি ভয়জাগানো ব্যাটার দীনেশ কার্তিকের হাতে একটি করে ছয়-চার খেয়েও তাঁকে আউট করে স্টার্ককে ২১ রান দিয়ে গিয়েছিলেন তো বটেই, ব্যাট হাতে ২০ বলে ২৭ (চারটি চার), রাসেলসুলভ না হলেও কেকেআর ইনিংসকে ‘ডবল নেলসন’-এ পৌঁছে দিয়েছিল রমনদীপ সিংয়ের (৯ বলে ২৪, দুই চার, দুই ছয়) সঙ্গে।
সল্ট ম্যাচের শুরুটাও করেছিলেন দুর্দান্ত। ১৪ বলে ৪৮, তিনি আউট হওয়ার সময় কেকেআর-এর রান ৫৬, ওভার ৪.২! সাত চার তিন ছক্কায় ৪২ ডিগ্রির গরমে আরসিবি আরও ঘর্মাক্ত তখন। মহম্মদ সিরাজের বলে পতিদার ক্যাচ নেওয়ায় ইডেনের গ্যালারি হঠাৎ-উচ্ছ্বসিত। অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার ৫০ করলেও বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ দুপ্লেসির দুরন্ত ক্যাচে ফিরেছিলেন, রিঙ্কু সিং-ও পারেননি যশ দয়ালের (সেই যাঁর বলে শেষ ওভারে পাঁচ ছক্কার রূপকথা লিখেছিলেন গত বছর) মাথার ওপর দিয়ে বল টপকে ফেলতে। ফলে, প্রয়োজনীয় গতি আর পায়নি ইনিংস, আড়াইশোর দিকে যাওয়ার।
বেঙ্গালুরু ইনিংসের শুরুতেও বড় আঘাত। বিরাট কোহলির সঙ্গে ইডেনের অন্য সখ্য থাকলেও রবিবারের সন্ধেয় ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট বলের উচ্চতা বুঝতে ভুল করে ক্যাচ দিয়েও রিভিউর আবেদন করেছিলেন এবং টিভি আম্পায়ার তাঁকে আউট দেওয়ার পর ফিরে গিয়েছিলেন পুরনো মেজাজহারানো বিরাটে, যা একেবারেই অনাবশ্যক। অবশ্য দলের ক্রমাগত হার এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে এই প্রতিযোগিতায় আবারও খেলতে দেখতে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই হয়ত হতাশার তেমন বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু ফাফও তার পরপরই আউট হওয়ায় ম্যাচ শেষ ধরে নেওয়া ইডেনের ৫৪ হাজার ৩৬৫ জনের গ্যালারিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছিলেন অখ্যাত জ্যাকস আর পতিদার। সারের জ্যাকস-এর দ্য হান্ড্রেড-এ সেঞ্চুরি আছে, পতিদার তো আইপিএল-এই শতরান করেছেন আগে। ম্যাচের সেরা জুটি রাজত্ব করল সেই সময়। ফার্গুসন যদি শুরুতে সল্টের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে এক ওভারে ২৮ রান দিয়ে থাকেন, কলকাতার স্টার্ক ও পরিবর্ত সুয়শ শর্মাও ২২ রান করে দিয়েছিলেন একটি করে ওভারে। স্টার্কের প্রথম দু-ওভারে ৩৬, সুয়শের প্রথম দু-ওভারে ৩৩ – কে যে বেশি খারাপ, বলা মুশকিল! সেই জুটির পর আরসিবি-র ভরসা ছিল কলকাতার প্রাক্তন অধিনায়ক ডিকে। কিন্তু এখনও কলকাতার ভরসা রাসেল তাঁকে আউট করার পর সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। হতও না, স্টার্ক শেষ ওভারে আবারও তিনটি ছক্কা না-দিলে!
শেষ ভাল হলেও তাই বলা যাচ্ছে না সব ভাল কেকেআর-এর!
3 Responses
Beutiful comment Kashi Da
সুন্দর বিশ্লেষণ করেছ হে কাশীনাথ। তবে নুনের ওপর বেশি নির্ভর না করাই ভালো, অন্যথায় চাপ বাড়তে কতক্ষণ!
মিশেল স্টার্ক বড় ম্যাচের প্লেয়ার। প্লে-অফ এ ফর্মে ফিরবে। নীতিশ রানার টিম এ জায়গা হচ্ছে না মানে সত্যিই বড় টিম এ বছর।