ব্রাজিলের নতুন কোচের পুরনো ভাবনা
দিনিজিসমো!
ব্রাজিলজুড়ে এখন নতুন রব। কোচ ফেরনানদো দিনিজ-এর নামে নতুন ফুটবলের আহ্বান। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে পরপর দুটি ম্যাচ হেরে সমর্থকরা হতাশার মাঝেও আলো খুঁজছেন ‘কেয়ারটেকার’ ম্যানেজারের ফুটবলদর্শনে। লিওনেল মেসির বিশ্বসেরা আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে মারাকানায় খেলতে নামার ঘণ্টাআটেক আগেও যা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
দিনিজিসমো ঠিক কী?
এক বাক্যে বোঝাতে গেলে – ব্রাজিলের ফুটবল যা ইউরোপীয় নয় চরিত্রে।
কিন্তু এমন বললে কিছুই বোঝানো যাবে না। আসলে অ্যান্টি-পেপ! কাতালান পেপ গারদিওলার পছন্দ ‘পোজিশনাল’ ফুটবল। প্রত্যেক ফুটবলার যেন তাঁর সুনির্দিষ্ট ‘পোজিশন’-এ থাকেন, গারদিওলার একমাত্র চাহিদা। তখনই সম্ভব সেই ‘পজেশনাল’ ফুটবল, যা ম্যানচেস্টার সিটির ম্যানেজারের স্বপ্ন। ফুটবলাররা নিজেদের জায়গায় না থাকলে বল ছিটকে এলে ধরতে পারবেন না, বল-পায়ে খেলার প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যও ধরে রাখা যাবে না। তাই এত গুরুত্ব মাঠে ফুটবলারদের অবস্থানে। কেউ ঠিক জায়গায় না থাকলেই সাইডলাইনে শুরু পেপের দাপাদাপি। আর গারদিওলার দেখাদেখি ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে অন্য ম্যানেজারদেরও।
দিনিজ এই শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। মনে করেন, ইউরোপীয় ফুটবল এভাবেই ব্রাজিলীয় ফুটবল দর্শনের সর্বনাশ করছে। অদ্ভুত একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা। বিশ্বকাপের পর তিতিবিরক্ত তিতে সরে গিয়েছিলেন, কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দিতে না পেরে। ব্রাজিলের ফুটবলকর্তারা আর রাখঢাক করেননি। দেশের ঠাকুর ফেলে কথা বলেছিলেন ইউরোপীয় কার্লো আনচেলোত্তির সঙ্গে। ইতালীয় সাদা চুলের আনচেলোত্তি সাদাজার্সির রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২০২৩-২৪ মরসুম পর্যন্ত। ব্রাজিলীয় মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, আনচেলোত্তি নাকি দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন ২০২৪-এর মাঝামাঝি থেকে। তাই, এই অন্তর্বর্তী সময়ে ম্যানেজার হিসাবে কাউকে দরকার ছিল। খুঁজে পাওয়া যায় দিনিজকে। তিনিও রাজি হয়েছিলেন শর্তসাপেক্ষে। ক্লাব ফ্লুমিনেসে ছাড়বেন না। জাতীয় দলের প্রয়োজন যখন, এসে দায়িত্ব পালন করবেন। একাধারে ফ্লুমিনেসে এবং ব্রাজিলের ম্যানেজার এখন দিনিজ, ফুটবলবিশ্বে বিরল ঘটনা!
কিন্তু দিনিজ যা করতে চাইছেন, ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীদের সমর্থন থাকছে সঙ্গে। ইউরোপ-বর্জন তাঁর মূলকথা। বিরাশির বিশ্বকাপ ব্রাজিল জেতেনি। কিন্তু মন জয় করেছিল ফুটবলে। দিনিজের আদর্শ বিরাশি! এমনও বলা হচ্ছে, বিরাশির মতো ফুটবল খেলে সত্তরের ব্রাজিলের মতো জিততে আগ্রহী। ফুটবলে সর্বকালের সেরা দুটি ব্রাজিল দলের এই ফুটবল ফিরিয়ে আনাই তাঁর লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েই ফ্লুমিনেসেকে খেলাচ্ছেন, সেই ধরন ফিরিয়ে আনতে চাইছেন জাতীয় দলে। যেহেতু এখন ব্রাজিলের সবাই ইউরোপেই খেলেন, সমস্যা বাড়ছেও। ইংল্যান্ডে ক্লাব ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত রিশার্লিসন তো দিনিজের অনুশীলন এবং ভাবনার সঙ্গে এতটাই দূরত্ব অনুভব করছেন যে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা, লিখছে ইংল্যান্ডের কাগজ! তাদের লেখাকে এত গুরুত্ব দেওয়াও অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হচ্ছে, অস্বীকারের জায়গা নেই।
আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে আরও সমস্যা, নেইমার, কাসেমিরো এবং বিনিসিউস জুনিয়রের অনুপস্থিতি। এমনিতেই পাচ্ছিলেন না নেই-কাসেকে, কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে বিনিসিউসও চোট পাওয়ায় দিনিজের সমস্যা বেড়েই চলেছে। নতুনভাবে খেলাতে গিয়ে সেরা ফুটবলারদের দলে না পেলে যা হয়। তার ওপর, নেইমার এবং বিনিসিউস বেশ কিছুদিন বাইরে থাকবেন, কাসেমিরো ফিরবেন হ্যামস্ট্রিং-এর চোট সারিয়ে। বুধবার ভোরে (ভারতীয় সময়) আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে খেলার পর যদিও মার্চের আগে আর জাতীয় দলের খেলা নেই। সেটাও আবার সমস্যা দিনিজের, কারণ, জাতীয় দলকে নতুন পদ্ধতিতে খেলিয়ে তৈরি করার সময় এবং সুযোগ কোনওটাই পাচ্ছেন না।
বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে শেষ দুটি ম্যাচে হারের পর যদি মেসির আর্জেন্তিনাও হারিয়ে দিয়ে যায় মারাকানায়, ব্রাজিলজনতা কি সহ্য করবে নতুনের, থুড়ি, পুরোনোর জয়গান গাওয়া ম্যানেজারকে?
মেসি-ম্যাচ তাই এখন অস্তিত্বের প্রশ্ন দিনিজিসমোরও!
ছবি ইন্টারনেট থেকে