কাশীনাথ ভট্টাচার্য
কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর
এমবিএসজি – ৩ (কামিন্স ১০, পেট্রাটোস ৩৫, মনবীর ৬৪)
পাঞ্জাব – ১ (লুকা ৫৩)
সহজ শুরু মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট-এর। আই লিগ থেকে প্রথম দল হিসাবে আইএসএল-এ সুযোগ পাওয়া পাঞ্জাব এফসিকে ঘরের মাঠে ৩-১ হারিয়ে, বিশেষ ঘাম না ঝরিয়েই।
স্পেনীয় খুয়ান ফেরানদো বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা দেখেই কৌশল তৈরি করেন। তাঁর রক্ষণে শনিবার শুরুতে তিন স্টপার। ব্রেন্ডন, আনোয়ার, একতর ইউস্তে। ডানদিকের সাইড ব্যাক আশিস রাই শুরু থেকেই রাইট হাফের জায়গায়। শুভাশিস বসু যদিও রক্ষণের বাঁদিকেই ছিলেন, একটু এগিয়ে। ঠিক পাঁচ মিডফিল্ডার না হলেও কাছাকাছি যেখানে দুই সাইড ব্যাকের কাজ নিয়মিত ওপরে উঠে যাওয়া প্রান্ত ধরে। বিপক্ষ রক্ষণে নিয়মিত দৌড়ে সমস্যা বাড়ানোর চেষ্টায় সাহাল আর লিস্টন কোলাসো, মাঠের মাঝখানে ধ্বংসাত্মক ভূমিকায় গ্ল্যান মার্টিনস। দুই অস্ট্রেলীয় ওপরে – কামিনস ও পেট্রাটোস। হ্যাঁ, কামিনসের জন্ম স্কটল্যান্ডে হলেও যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের হয়েই খেলেন, এমনকী বিশ্বকাপেও খেলেছেন, তাঁকে অস্ট্রেলীয় ধরতে অসুবিধা নেই।
সত্তর কোটি এবং আইএসএল-এ সবচেয়ে সফল দলের বিরুদ্ধে সদ্য খেলতে-আসা পাঞ্জাব এফসির অভিষেক ম্যাচ যেমন হওয়া উচিত ছিল, তেমনই। প্রথমার্ধ শেষে অন্তত তিনগোলে এগিয়ে থাকার কথা। সংযুক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে কর্নার থেকে বল সব মাথা টপকে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে অপেক্ষমান একতরের পায়ে, একেবারে গোললাইনের সামনে। আশার এতটাই অতীত যে, একতর গোলে ঠেলতে পারেননি। তারপরই প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি।
তার আগে দুই অস্ট্রেলীয়র দুটি গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সুপার জায়েন্ট, দুটিই সহজ গোল। প্রথম গোলের সময় আশিসের থেকে গ্ল্যান হয়ে সাহালের পায়ে, সাজিয়ে দিয়েছিলেন কামিনসের জন্য। দ্বিতীয় গোলের সময় কামিনসের পায়ে আক্রমণ শুরু। লিস্টনকে দিয়েছিলেন। গোলকিপারের কাছাকাছি বল পেয়ে লিস্টন পেছনে পাঠিয়ে দেন যেখানে গোলের গন্ধে ছুটে এসেছিলেন পেট্রাটোস। তাঁরও বাঁপায়ের শট এবং দলের দ্বিতীয় গোল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চাপ বাড়িয়েছি!ল পাঞ্জাব। শুরুতেই প্রশান্ত সুযোগ নষ্ট করেছিলেন। পরে অযাচিত সুযোগ পেয়ে ব্যবধান কমিয়েছিলেন লুকা মাইসেন। গ্ল্যান মার্টিনসের ঠিক কী মনে হয়েছিল, বোঝা কঠিন। কলকাতা ময়দানের পুরনোদের মনে পড়তে পারে চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়কে। গ্ল্যানের ব্যাকপাস অবশ্য আরও বিপজ্জনক কারণ সরাসরি গিয়েছিল পাঞ্জাবের অধিনায়কের পায়ে। স্লোভেনীয় ফুটবলার ভুল করেননি বিশাল কাইথকে পরাস্ত করতে।
প্রথম গোল পেয়ে সমতা ফেরানোর চেষ্টায় মরিয়া হতে চেয়েছিল স্তাইকোস ভেরজেতিসের পাঞ্জাব। গ্রিস বলতেই মনে পড়তে পারে ২০০৪ ইউরো জয়, চরম রক্ষণাত্মক খেলে। পাঞ্জাব অবশ্য পারেনি রক্ষণ ততটা নিশ্ছিদ্র রাখতে। আবার সুপার জায়েন্ট-এর নিরন্তর আক্রমণের কারণে দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া আক্রমণেও যেতে পারেনি। ৬২ মিনিটে ফেরানদো তুলে নিয়েছিলেন শুভাশিস বসুকে, মাঠে এসেছিলেন মরবীর সিং, পুরোপুরিই তিন ব্যাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফেরানদো। প্রথম ছোঁয়ায় দলের তৃতীয় গোল মনবীরের, ৬৪ মিনিটে। বাঁদিক থেকে পেট্রাটোস বল বাড়িয়েছিলেন বক্সে, মনবীরের বুদ্ধিদীপ্ত টোকায় বল জালে। আবরও দু-গোলের ব্যবধান এবং ফেরানদোর পরীক্ষা শুরু। এবার দুই অস্ট্রেলীয়কে তুলে উগো বুমো এবং আরমান্দো সাদিকুকে খেলার সুযোগ দেওয়া।
মার্টিনসের ব্যাকপাস ছাড়া প্রায় নিখুঁত পারফরম্যান্সে তিন পয়েন্ট নিয়ে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে নামবে এমবিএসজি। একতরফা না-হওয়ারই সম্ভাবনা!
এমবিএসজি: বিশাল কাইথ; ব্রেন্ডন হামিল, আনোয়ার আলি, একতর ইউস্তে (স্পেন),শুভাশিস বসু (মনবীর সিং ৬২); আশিস রাই, সাহাল আবদুল সামাদ (অভিষেক সূর্যবংশী ৭৯), গ্ল্যান মার্টিনস (লালরিনলিয়ানা নামতে ৭৯), লিস্টন কোলাসো; ডিমিট্রি পেট্রাটোস (অস্ট্রেলিয়া) (আরমান্দো সাদিকু (আলবানিয়া) ৬৯), জ্যাসন কামিনস (অস্ট্রেলিয়া) ( উগো বুমো (ফ্রান্স) ৬৯)
রেফারি – আর বেঙ্কটেশ
ছবি – আইএসএল