রাইট স্পোর্টস ওয়েব ডেস্ক
কলকাতা, ২০ অগাস্ট ২০২৩
হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদ পাননি ‘ভারতরত্ন’। তা নিয়ে ক্ষোভ, অসন্তুষ্টি? জানতে চাওয়ায় ধ্যানচাঁদ-পুত্র অশোককুমার জানালেন, ‘বহুদিন আগের ঘটনা বলি। বিশ্বকাপ জেতার পর চিঠি লিখে ফেলেছিলাম ভারত সরকারের এক মন্ত্রীকে। বাবার স্বাক্ষর নিতে গিয়েছিলাম। সব জেনে বলেছিলেন, সই করবেন না। কারণ, তাঁর কাজ তিনি করেছিলেন। এবার অন্যদের যা কাজ, করতে দেওয়া উচিত। কিন্তু চিঠি লিখে, ভিক্ষে করবেন না। ভিখ নহি মাঙনা হ্যায়। আমরা তারপর আর কখনও কিছু বলিনি। বাবার কাজ তো বাবা করেই গিয়েছিলেন। ভারত সরকার যদি মনে করে, দেবে। আমাদের কিছু বলার নেই।’
কলকাতা স্পোর্টস জার্নালিস্টস ক্লাব এবং স্কাই ব্রিজের যৌথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অশোককুমারের কথা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল, হকির ব্যাপারে কোনও দাবি-দাওয়া-চাহিদায় ধ্যানচাঁদ পরিবার নেই। তাই বোধহয় পুরুষদের হকিতে বিশ্বে তৃতীয় এবং মেয়েদের হকিতে অষ্টম হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় হকি নিয়ে মিডিয়ার কোনও হেলদোল নেই। রিঙ্কু সিং-যশস্বী জয়সওয়ালদের নিয়ে দিব্যি পাতা ভরিয়ে চলেছে রোজ!
অশোককুমার আরও বলছিলেন, ‘জার্মানিতে অলিম্পিক্সে সোনা জিতে সেই রাতে যখন ভারতীয়রা উৎসবে সামিল, বাবা ছিলেন না। খুঁজতে খুঁজতে কয়েকজন সতীর্থ তাঁকে আবিষ্কার করেছিলেন অলিম্পিক ভিলেজের সেই জায়গায় যেখানে সব দেশের পতাকা উড়ছিল। ভারত তখনও পরাধীন। তাই ভারতীয়দের খেলতে হয়েছিল ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক নিয়ে। বাবা তখন বলেছিলেন সতীর্থদের, তাঁর ইচ্ছে দেখে যাবেন ভারতীয়রা অলিম্পিকে খেলছে নিজেদের জাতীয় পতাকাতলে।’
বিশ্বকাপ হকিতে ভারত একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক এবং ফাইনালে চিরশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোলটাও তাঁরই। বাবার পরিচয় ছেড়েই দিন, অশোককুমার নায়ক তো নিজের দক্ষতাতেই। পুরনো দিনে ফিরে যাচ্ছিলেন যখন দিল্লি থেকে হাওড়া এসে পাঁচটাকা ‘হাতেটানা’ রিকশাওয়ালাকে দিয়ে হাওড়া স্টেশন থেকে খিদিরপুর মেসে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আর, কলকাতায় এসেছিলেন ইনাম-উর রহমানের টানে, তাঁর পাশে খেলবেন বলে, তাঁকে দেখে শিখবেন বলে। কিন্তু এ পোড়া দেশে অশোককুমারদের গল্পকথা শুনতে আগ্রহী কে!
অনুষ্ঠানে তারকাদের মেলা। গৌতম সরকার, অরুণলাল, দিব্যেন্দু বড়ুয়া, বুলা চৌধুরি, জ্যোতির্ময়ী শিকদার, সঞ্জীব চক্রবর্তী, রাহুল ব্যানার্জি, টুম্পা দেবনাথ, আবদুল মুনায়েম। ছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্তও। গৌতমের কথায়, ‘এমন মঞ্চ দেখে মন ভ’রে যায়। সব খেলার সেরারা, একত্রিত। এ বোধহয় আমাদের বাংলাতেই সম্ভব। হ্যাঁ, বাংলার ফুটবল, বাঙালির ফুটবল নিয়ে এখন হয়ত আমাদের সময়ের মতো গর্বিত হওয়ার উপাদান কম। কিন্তু আমার বিশ্বাস, বাংলার ফুটবল আবার স্বমহিমায় ফিরবেই।’
বাংলার লাল অরুণলাল যেমন খুশি বাংলার ক্রিকেট নিয়ে। ‘হয়ত রনজি ট্রফি জেতেনি। কিন্তু গত বছর পাঁচেক ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলা সেরা দল। দুবার ফাইনাল খেলল, সেমিফাইনালেও পৌঁছচ্ছে নিয়ম করে। এটাই আসল ধারাবাহিকতা। সৌরাষ্ট্র আমাদের হারিয়ে রনজি ট্রফি প্রথম যেবার পেল, পরের বছর তত ভাল খেলতে পারেনি। আমরা পারছি। এই প্রসেসটা গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে চললে ট্রফিও আসবে।’
টুম্পা মনে করেন দীপা কর্মকারের এশিয়ান গেমসে সুযোগ প্রাপ্য ছিল, জ্যোতির্ময়ীর হিসাবে দ্যুতি চাঁদ ডোপপরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও সার্বিকভাবে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের ছবিটা হয়ত ততটা হতাশাজনক নয়, বুলা এখন্ও নিজের স্বপ্নের পেছনেই ছুটছেন, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোসহ একটি সাঁতারের আকাদেমি তৈরির। অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হল দুই উঠতি খেলোয়াড় নীলাশ সাহা এবং মোহর মুখোপাধ্যায়কে।
অনুষ্ঠানে বড় প্রাপ্তি, অশোককুমারের গলায় কিশোরকুমারের গান, ‘জীবনসে ভরি তেরি আঁখে মজবুর করে জিনে কে লিয়ে’!