কাশীনাথ ভট্টাচার্য
কলকাতা ● ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
প্রথম ইনিংসে ২৩০ রানে পিছিয়ে। রনজি ফাইনালের ফল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার মতো ব্যবধান। কিন্তু তারপরও প্রায় আড়াই দিন হাতে। তাই হার সম্মানজনক করার লড়াই এখন মনোজ তিওয়ারিদের। আর সেই লড়াই-এর পতাকা হাতে ব্যাট করছেন অধিনায়ক। দিনের শেষে তিনি অপরাজিত ৫৭। আর বাংলা পিছিয়ে আছে এখনও, ৬১ রানে।
এই লড়াই আরও জোরদার হতে পারত দ্বিতীয় ইনিংসে অনুষ্টুপ মজুমদার নিজের ৬১ রানে গালিতে ক্যাচ দিয়ে না-ফিরলে। এবারের রনজিতে মোট ৮৬৭ রান করে ব্যাটারদের তালিকায় তিনি তৃতীয়, ময়াঙ্ক আগরওয়াল (৯৯০) ও অর্পিত বাসবড়ার (৯০৭) পর। কিন্তু, বাংলা তাঁকে চেয়েছিল আরও কিছুক্ষণ। অন্তত তৃতীয় দিনটা পার করে দিতে পারলে চতুর্থ সকালে নতুন উদ্যমে নামতে পারত। মনোজের সঙ্গে জুটিতে ততক্ষণে ৯৯ রান জুড়েও ফেলেছিলেন। কিন্তু, এই রনজি ফাইনালে যে বাংলা যখন যা পেয়েছে কখনও হয়নি!
প্রথম দিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে বাধ্য, প্রথম ঘণ্টায় ৩৪ রানে পাঁট উইকেট হারানো, দ্বিতীয় দিনে মোটে তিনটি উইকেট পাওয়ায় পেছনের পায়েই ছিল বাংলা। তৃতীয় সকালে শুরুতেই অর্পিত বাসবড়াকে (৮১) তুলে নেওয়ার পরও প্রায় মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত সৌরাষ্ট্রের ইনিংস এগোতে দেওয়া আরও একটি কারণ যেমন। ৩১৮ রানে অর্পিত আউট, তারপরও সৌরাষ্ট্র ৪০৪ রানে ইনিংস শেষ করল। এগার নম্বরে নেমে ধর্মেন্দ্রসিং জাডেজার ৩৮ বলে ২৯। তার চেয়েও বড়, দশম উইকেটে মোট উঠেছিল ৩৫! রনজি জিততে চাওয়া দলের পারফরম্যান্স, বলে দিয়েছিল সৌরাষ্ট্রের তাগিদ।
সেই তাগিদ বিস্ময়করভাবেই অনুপস্থিত বাংলার দ্বিতীয় ইনিংসেও। হাতে দুটো দিন এবং আরও দুটি সেশন। অন্তত দেড়শো রানে এগোতে তো হবেই, ১৭০-১৮০ হলে ভাল। শেষ দিন তারপর না হয় ভরসা করা যেতে পারে শাহবাজের হাতের ভেলকিতে। কিন্তু অভিষেকে দ্বিতীয় সুযোগেও সুমন্ত গুপ্ত হতাশই করলেন। ক্লাবের হয়েও যিনি কখনও ইনিংস শুরুর দায়িত্ব সামলাননি, হঠাৎ করে তাঁকে রনজি ফাইনালে অনভ্যস্ত জায়গায় নামিয়ে দেওয়ার কারণে তাঁর চেয়েও বেশি দায় নিতে হবেই বাংলার দল পরিচালন সমিতিকে।
সুমন্তর অনভিজ্ঞতা কারণ হতে পারে, অভিমন্যু ঈশ্বরণ এবং সুদীপ ঘরামি (একই রকমভাবে রনজি ফাইনালে যাঁর অভিষেক হয়েছিল তিন বছর আগে) কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগের সদ্ব্যবহারেও ব্যর্থ। উনাদকাট-সাকারিয়া বল করলে উইকেটে হঠাৎ ‘জান’ এসে যায়, বাংলার পেসারদের সময় যার অনুপস্থিতি আবার রহস্যজনক! তাই ৪৭-এ তিন, বাংলা আবারও ধুঁকছে!
হাল ধরেছিলেন দুই অভিজ্ঞ। অনুষ্টুপ ছন্দে ছিলেন মরসুমজুড়ে। শুরুতে জড়তা থাকলেও মনোজ ক্রমশ কাটিয়ে উঠলেন। নিজের চতুর্থ রনজি ফাইনালে, দল তাঁর দিকেই তাকিয়ে এমন সময়, মনোজের ব্যাট কথা বলল। কে জানে, হয়ত নিজের শেষ রনজি ম্যাচে!
রবিবারের সকালটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। উনাদকাটদের হাতের বল ৫৩ ওভার পুরনো, নতুন বল নিতে আরও ২৭ ওভার, অর্থাৎ মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। উইকেট ততক্ষণে সহজতর হয়ে যাওয়ার কথা। অধিনায়ক এবং অলরাউন্ডার শাহবাজের ব্যাটে বড় রানের সন্ধানে এখন বাংলা।
যদি না-পারেন? ইনিংস হারের খাঁড়া কিন্তু এখনও ঝুলছে!
স্কোর
বাংলা প্রথম ইনিংস ১৭৪
সৌরাষ্ট্র প্রথম ইনিংস (দ্বিতীয় দিন ৫/৩১৭)
অর্পিত বাসবড়া ক অভিষেক ব মুকেশ ৮১
চিরাগ জানি ক অভিষেক ব মুকেশ ৬০
প্রেরক মানকড় ক অভিষেক ব আকাশদীপ ৩৩
জয়দেব উনাদকাট ক অভিষেক ব আকাশদীপ ৪
পার্থ ভুট অপরাজিত ১৪
ধর্মেন্দ্রসিং জাডেজা ক পরিবর্ত (সাইফি) ব ইশান ২৯
অতিরিক্ত ৩৫
মোট (১১০ ওভারে) ৪০৪
উইকেট পতন – ৬/৩১৮, ৭/৩৪৩, ৮/৩৫৮, ৯/৩৬৯, ১০/৪০৪
বোলিং
মুকেশ : ৩৭-৯-১১১-৪, আকাশ দীপ : ৩৬-৩-১১১-৩, আকাশ ঘটক : ৭-১-২৯-০, ইশান : ২১-৩-৮৬-৩, শাহবাজ : ৮-০-৩৫-০, মনোজ : ১-০-৫-০
বাংলা দ্বিতীয় ইনিংস
সুমন্ত গুপ্ত ক প্রেরক ব শাকারিয়া ১
অভিমন্যু ঈশ্বরণ ক হার্বিক ব শাকারিয়া ১৬
সুদীপ ঘরামি ক প্রেরক ব উনাদকাট ১৪
অনুষ্টুপ মজুমদার ক বিশ্বরাজ ব উনাদকাট ৬১
মনোজ তিওয়ারি অপরাজিত ৫৭
শাহবাজ আমেদ অপরাজিত ১৩
আকাশ ঘটক ক উনাদকাট ব শাকারিয়া ১৭
অতিরিক্ত ৭
মোট ৪/১৬৯ (৫৩ ওভারে)
উইকেট পতন – ১/১, ২/২২, ৩/৪৭, ৪/১৪৬
বোলিং –
জয়দেব উনাদকাট : ১, চেতন শাকারিয়া : ১৩-২-৫০-২, চিরাগ জানি : ৫-০-১২-০, ধর্মেন্দ্র সিং জাডেজা : ৮-১-২১-০, প্রেরক মানকড় : ৯-১-২১-০, পা্র্থ ভুট ৪-০-১২-০