সবুজ উইকেটে বিবর্ণ বাংলার রনজিজয়ের আশা

কাশীনাথ ভট্টাচার্য

কলকাতা ● ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

হয়ত কিছুই অসম্ভব নয় ক্রিকেটে।

হয়ত শুক্রবার সকালের একটা সেশনেই ঘুরে যেতে পারে সব।

হয়ত এখান থেকেও ফিরে আসা সম্ভব।

কিন্তু, ভবিষ্যতের গর্ভে কী আছে তা তো আর বর্তমানে বসে দেখা যায় না। তাই বৃহস্পতিবারের পড়ন্ত বেলায় দাঁড়িয়ে ইডেন গার্ডেন্স জানিয়ে দিচ্ছে, বাংলার তৃতীয় রনজি জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার পথে এগোচ্ছে, জোরকদমে!

রনজি ট্রফির ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৪ রানে ইনিংস শেষ করার পর, আর কী-ই বা আশা অবশিষ্ট? তা-ও আবার, দিনের শেষে সৌরাষ্ট্র মাত্র দুই উইকেট হারিয়েই তুলে নিয়েছে ৮১ রান। অর্থাৎ, বাংলা মাত্র ৯৩ রানে এগিয়ে। এবং যা আরও গুরুত্বপূর্ণ, সৌরাষ্ট্রের সেরা ব্যাটার অর্পিত বাসবদা, বছর তিনেক আগের যে-ফাইনালে বাংলার মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছিলেন যিনি ১০৬ রানের ইনিংস খেলে, এখনও উইকেটে আসেননি।

সকালে ইডেনে ৩৩ বছর আগের জয়ীদের চাঁদের হাট। ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরুর সঙ্কেত সে বারের রনজিজয়ী সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। কিন্তু তার আধঘণ্টা আগেই হয়ত বেজে গিয়েছিল বাংলার বিপদঘণ্টা। টস হেরে গিয়েছিলেন মনোজ তিওয়ারি, জিতে জয়দেব উনাদকাট আবারও ঠিক সিদ্ধান্ত বোলিং-এর। সবুজ উইকেটে দুই বাঁহাতি পেসার মন দিলেন সেই কাজটা করতে যা করতে চেয়েছিল বাংলা। প্রথম ঘণ্টাতেই ৩৪ রানে পাঁচ। প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুমন্ত গুপ্ত, সুদীপ ঘরামি, মনোজ এবং অনুষ্টুপ মজুমদার। ম্যাচ কি ওখানেই শেষ?

লড়াই শুরু করেছিলেন আকাশ ঘটক আর শাহবাজ আমেদ। ঘটক অবশ্য ৪৮ বলের ইনিংসে প্রথমবার ধৈর্য হারালেন এবং আউট। বাংলার ব্যাটিং-এর সেরা সময় তারপর। শাহবাজের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন অভিষেক পোড়েল। সপ্তম উইকেটে উঠল ১০১ রান। শাহবাজ সুইপ করতে গিয়ে উইকেট দেওয়ার আগে ৬৯ করলেন নিজে। দুবার বাঁচলেন ডিআরএস-এ, অভিষেকও একবার। কিন্তু শেষরক্ষা হল না, বল তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে বিশ্বরাজ জাডেজার হাতে যাওয়ায়।

এরপর বাংলা ইনিংসে ব্যাটার বলতে আর কেউ ছিলেন না। অভিষেকেরও তাই বোধহয় তাড়া ছিল। ব্যক্তিগত অর্ধশতরান করেই আউট। মুকেশ-আকাশদীপ-ইশানদের থেকে বিশেষ প্রত্যাশা ছিল না কারও। ১৭৪ রানেই ইনিংস শেষ।

প্রশ্ন উঠবে সুমন্ত গুপ্তর রনজি ফাইনালে অভিষেক নিয়েও। করণ লাল বড় রান পাননি হয়ত, কিন্তু প্রতিটি ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশ পেরচ্ছিল প্রায়, করণ নিজেও গোটা পঞ্চাশেক বল খেলছিলেন। সুমন্তর ইনিংস সেখানে তিন বলের। ঘটনার পর জ্ঞানী হওয়া সহজ, ঠিক। কিন্তু, টস হারলে সবুজ উইকেটে প্রথমে ব্যাট করতে হবে আর উনাদকাট ও চেতন শাকারিয়া, দুজনেই বাঁহাতি যাঁরা এই উইকেটের সদ্ব্যবহার করতে পারেন, এই ভাবনা কি ছিল না বাংলা শিবিরে? নাকি, টস জিতলে সৌরাষ্ট্রও ব্যাট করবে প্রথমে, নিশ্চিত ছিল বাংলার দল পরিচালন সমিতি? তেমন হয়ে থাকলে, দুর্ভাগ্য! উনাদকাট তো রনজিতে ৩০০ উইকেটের মাইলস্টোনেও পৌঁছলেন, শেষ উইকেট পেয়ে।

মুখে যতই বলা হোক, বাংলা শিবির আসলে তিন বছর আগের রনজি ফাইনালের হার নিয়ে হয়ত একটু বেশিই ভেবে ফেলেছিল। যুদ্ধং দেহি মনোভাব ভাল, তবে, এমন ম্যাচের আগে হারেরেরে মনোভাব নিজেদের ওপরই চাপ বাড়ায়। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে অধিনায়কের আউট হওয়া তারই নিদর্শন।

ইডেনে সকালের দু’ঘণ্টা পেসসহায়ক, ক্রিকেট-অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ। সেই দুটি ঘণ্টাতেই ছ’উইকেট সৌরাষ্ট্রের। তারপর উইকেট খানিকটা সহজ। সেই সুবিধা পুরোপুরি নিয়ে দিনের শেষে ৮১ রান তুলে নিলেন তাঁরা। শুক্রবার সকালে মুকেশ-আকাশদীপ জুটি যদি উনাদকাট-শাকারিয়াসম পারফরম্যান্স দেখাতে পারেন, একমাত্র তখনই দ্বিতীয় দিন ম্যাচে ফিরতে পারার ক্ষীণ সম্ভাবনা এখন বাংলার।

স্কোর

বাংলা প্রথম ইনিংস

সুমন্ত গুপ্ত ক জ্যাকসন ব শাকারিয়া ১

অভিমন্যু ঈশ্বরণ ক গোহলি ব উনাদকাট ০

সুদীপ ঘরামি ব শাকারিয়া ০

অনুষ্টুপ মজুমদার ক দেশাই ব জানি ১৬

মনোজ তিওয়ারি ক বিশ্বরাজ ব উনাদকাট ৭

আকাশ ঘটক ক উনাদকাট ব শাকারিয়া ১৭

শাহবাজ আমেদ ক বিশ্বরাজ ব ধর্মেন্দ্র ৬৯

অভিষেক পোড়েল অপরাজিত ৫

আকাশ দীপ ক উনাদকাট ব ধর্মেন্দ্র ৪

মুকেশ কুমার ক ও ব উনাদকাট ৪

ইশান পোড়েল অপরাজিত ০

অতিরিক্ত ৯

মোট ১৭৪ (৫৪.১ ওভারে)

উইকেট পতন – ১/১, ২/১, ৩/২, ৪/১৭, ৫/৩৪, ৬/৬৫, ৭/১৬৬, ৮/১৭২, ৯/১৭৪

বোলিং –

জয়দেব উনাদকাট : ১৩.১-৩-৪৪-৩, চেতন শাকারিয়া : ১৩-৪-৩৩-৩, চিরাগ জানি : ১১-২-৩৩-২, প্রেরক মানকড় : ১১-৪-৩৮-০, ধর্মেন্দ্র সিং জাডেজা  :  ৬-১-১৯-২

সৌরাষ্ট্র প্রথম ইনিংস

হার্বিক দেশাই অপরাজিত ৩৮

জয় গোহিল ব আকাশদীপ ৬

বিশ্বরাজ জাডেজা ক অভিষেক ব মুকেশ ২৫

চেতন শাকারিয়া অপরাজিত ২

অতিরিক্ত ১০

মোট ৮১-২

উইকেট পতন – ১/৩৮, ২/৭৩

বোলিং

মুকেশ : ৬-১-২৩-১, আকাশ দীপ : ৮-১-২৮-১, আকাশ ঘটক : ১-০-১০-০, ইশান : ১-০-১২-০ শাহবাজ : ১-০-২-০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *